লক্ষ্মীপুর জেলার ১৮০টি কমিউনিটি ক্লিনিকে সাড়ে তিন মাস ধরে প্রয়োজনীয় ওষুধ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। এতে জেলার প্রান্তিক অঞ্চলের রোগীরা প্রয়োজনীয় সেবা না পেয়েই খালি হাতে বাড়ি ফিরছেন। স্বাস্থ্যসেবা পাওয়ার একমাত্র ভরসাটি হারিয়ে কষ্টে গ্রামের অসচ্ছল পরিবারগুলো। অনেকেই কমিউনিটি ক্লিনিকের কার্যকারিতা নিয়েও এখন সমালোচনা করছেন।
প্রান্তিক অঞ্চলে নির্মাণ হওয়া কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো সাধারণত প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা, পরিবার পরিকল্পনা ও পুষ্টিসেবা দিয়ে থাকে; পাশাপাশি মা, নবজাতক ও অসুস্থ শিশুর সমন্বিত সেবা (আইএমসিআই), প্রজননস্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা সেবা এবং সাধারণ আঘাতের চিকিৎসা দেওয়া হয়। এ ছাড়া ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপের মতো অসংক্রামক রোগ শনাক্ত করে। বয়স্ক, কিশোর-কিশোরী ও প্রতিবন্ধীদের লক্ষণভিত্তিক চিকিৎসা ও পরামর্শও দেওয়া হয়। রোগীরা কমিউনিটি ক্লিনিক থেকে ২৭ ধরনের ওষুধ ছাড়াও শিশুদের অণুপুষ্টিকণার প্যাকেট পান।
জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্র জানায়, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে সরবরাহ বন্ধ থাকায় এখন রোগীদের ওষুধ দেওয়া হচ্ছে না। সাধারণত প্রতি তিন মাসে জেলা পর্যায়ে ওষুধ পাঠানো হয়। কিন্তু চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে ওষুধ আসা বন্ধ রয়েছে। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও কমিউনিটি ক্লিনিকে মজুত থাকা ওষুধ দিয়ে টেনেটুনে গত এপ্রিল মাস পর্যন্ত রোগীদের সেবা দেওয়া হয়। এরপর আর রোগীরা ওষুধ পাননি। এ কারণে রোগীদের দুর্ভোগে পড়তে হয়েছে।
গত রোববার লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার টুমচর এলাকার ডা. আনোয়ারুল হক ও মোখলেছুর রহমান কমিউনিটি ক্লিনিক থেকে ওষুধ নিতে আসা গৃহবধূ পারভীন আক্তার বলেন, ‘বাচ্চার জ্বর আর কাশি নিয়ে এসেছিলাম। ডাক্তার (স্বাস্থ্যকর্মী) প্রেসক্রিপশন দিয়েছেন, কিন্তু ওষুধ নেই। বাজার থেকে কিনতে হবে বলছেন। আমাদের জন্য এটা কষ্টকর।’
রায়পুর উপজেলার চরকাছিয়া গ্রামের কৃষক আমির হোসেন জানান, চরকাছিয়া কমিউনিটি ক্লিনিকে আগে জ্বর, সর্দিকাশি কিংবা পেটের ব্যথার মতো সাধারণ রোগের জন্য প্রয়োজনীয় ওষুধ বিনা মূল্যে পাওয়া যেত। এতে তাঁদের মতো কৃষক পরিবার অনেকটা স্বস্তিতে ছিল। কিন্তু গত জুলাই মাসে শেষ দিকে তিনি জ্বরে আক্রান্ত হলেও ক্লিনিকে গিয়ে কোনো ওষুধ পানি। বাধ্য হয়ে বাজার থেকে কিনেছেন।
ওষুধ না থাকায় অস্বস্তিতে রয়েছেন কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডাররাও (সিএইচসিপি)। তাঁরাই রোগীদের হাতে বিনা মূল্যে প্রয়োজনীয় ওষুধ দেন। জানতে চাইলে রায়পুর উপজেলার উত্তরচর বংশী কমিউনিটি ক্লিনিকের প্রোভাইডার মো. মহসিন মিয়া বলেন, ‘প্রতিদিন জ্বর, সর্দিকাশি, ডায়রিয়া, রক্তচাপ ও ডায়াবেটিসের মতো রোগ নিয়ে মানুষ আসেন। ওষুধ না থাকায় তাঁদের খালি হাতে ফিরিয়ে দিতে হচ্ছে। অনেক সময় রোগীরা হতাশ হয়ে আমাদের ওপর ক্ষোভ প্রকাশ করেন।’
জেলা সিএইচসিপি অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শরীফ হোসাইন বলেন, ‘ওষুধ না থাকায় তাঁদের হাত-পা গুটিয়ে বসে থাকতে হয়। অনেক রোগী চিকিৎসা না নিয়েই বাড়ি চলে যাচ্ছেন। এতে স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ছে। স্বাস্থ্যকর্মীরাও বিব্রত হচ্ছেন।’
অবশ্য সারা দেশে একই অবস্থা চলছে দাবি করেন লক্ষ্মীপুরের সিভিল সার্জন মোহাম্মদ আবু হাসান। তিনি বলেন, ‘কেন্দ্রীয় পর্যায়ে ওষুধ সরবরাহে বিলম্ব হয়েছে। আমরা একাধিকবার চিঠি পাঠিয়েছি। আশা করছি এক-দুই সপ্তাহের মধ্যে সমস্যার সমাধান হবে।’